নিজম্ব প্রতিনিধি : চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ফরিদপুর শহরতলির ওয়ারলেস পাড়ার বাসিন্দা শারমিন আক্তার খুকু (৪০)কে বেধরক মারপিট ও শ্লীতাহানীসহ তার নিকট থেকে নগত টাকা ও মুল্যবান জিনিস পত্রের ক্ষতি সাধন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ১১ জন চাঁদাবাজসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন এর বিরুদ্ধে ফরিদপুর নগরকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে যার নং ৯, তাং ১১/১/২০২২।
মামলার নথি ও ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার এর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, জেলার নগরকান্দা উপজেলার ভোজের ডাঙ্গিতে ওশান এগ্রো ফার্ম নামে একটি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে ৩ বছর সুনামের সহিত চাকরি করে আসছেন তিনি। তবে চাকরির কিছু দিন পর থেকেই স্থানীয় আ: জব্বার (৫৮), বর্ণা (৩৫), শেখ শাজাহান (৫৬) জাকির হোসেন (২৯), ঝর্ণা বেগম (৪৫), তানিয়া বেগম (২৬) শেখ জিয়া (৩৮), শেখ শামছুল হক (৪৫) মাহাবুব (৩০), অর্পিতা (১৮), ঝর্ণা বেগম (৩৬) সংঘবদ্ধ হয়ে ওশান এগ্রো ফার্ম এর ব্যবসা পরিচালোনার সুবাদে চাঁদা দাবি করে।
একই সাথে তাদের চাঁদা না দিয়ে এই স্থানে ওশান এগ্রো ফার্ম এর ব্যাবসায়ীক কর্মকান্ড পরিচালোনা করলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালামাল ভাংচুরের হুমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শারমীন ফার্ম এর স্বত্ত্বাধীকারী নাফিসা খবির ঝর্ণাকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারী বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসার এক পর্যায়ে উল্লেখিত ব্যাক্তিরা আরো ক্ষিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মাস পুর্বে মামলার আসামীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়।
এ সময় ফার্মের ভেতরে ও বাইরে থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের আম বাগান, কুলের বাগান, পুকুরে থাকা মাছসহ বিভিন্ন শষ্যাদির নষ্ট করে অন্তত ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন। শারমিন অভিযোগে আরো জানান, উল্লেখিত আসামীরা প্রতিষ্ঠানের মোটা অংকের টাকার ক্ষতি করেও ক্ষান্ত না হয়ে পুনরায় তারা ৩ লক্ষ টাকার চাঁদা দাবি করে। এই টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত ১০ ই জানুযারী আনুমানিক বিকাল ৩ টার সময় উল্লেখিত আসামীগন সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন অতর্কিত ভাবে প্রবেশ করে মামলার ১ নং আসামী আ: জব্বারের হুকুমে তার সংঙ্গীরা প্রজেক্ট ম্যানেজার শারমীনকে এলোপাথারী মারপিট করতে থাকে।
এতে করে শারমীনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাত্ব নিলা ফুলা জখম হয়। এমনকি মারপিটের সময় শারমীনের পরনের ওড়না টানা হেচড়া করে শ্লিতাহানী করার চেষ্টা করে। তবে নিজেকে যৌনহয়রানী থেকে রক্ষার চেষ্টা করলে আসামীরা ব্যার্থ হয়ে তার কাছে থাকা ১ ভড়ি ওজনের স্বর্ণের চেইন যার আনুমানিক মুল্য ৭৫ হাজার টাকা, ৬ আনি ওজনের ৩০ হাজার টাকা মুল্যের এক জোড়া কানের দুল, ২০ হাজার মুল্যের একটি স্বর্ণের আংটিসহ ফার্মের নির্মান কাজের জন্য তার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় উল্লেখিত চাঁদাবাজকারিরা।
এ সময় শারমীনের ডাকচিৎকারে ফার্মের স্বত্ত্বাধীকারির স্বামী মো: খবির উদ্দিনসহ স্থানীয়রা আগাইয়া আসিলে উক্ত চাাঁদাবাজদ্বয় শারমীনকে মেরে ফেলাসহ ঐ প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তিতে আহত শারমীনকে উদ্ধার করে ফরিদপুরে আনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সে কিছুটা সুস্থতা বোধ করলেও তিনি মানসিক ভাবে এখনো অসুস্থ রয়েছে। এ ছাড়াও উক্ত আসামীদের ভয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করতেও পারছেনা শারমীন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারি নাফিসা খবির ঝর্ণা জানান, উল্লেখিত আসামীদ্বয় এর আগে চাঁদা দাবি করায় স্থানীয় ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যাথ হই। এর আগে আমার প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অনেক টাকার ক্ষতি সাধন করে। বর্তমানে আমার প্রজেক্ট ম্যানেজার শারমীনকে বিনা দোষে মেরে রক্তাত্ব জখম করেছে। তাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত পুর্বক প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিসহ ঐ প্রতিষ্ঠানে পুনরায় চাকরিতে যোগদানের বিষয় নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্ত ভোগী শারমীনসহ ঐ প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারি নাফিসা খবির ঝর্ণা।
এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ দৈনিক নাগরিক দাবিকে জানান, উল্লেখিত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৩ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যহত রয়েছে, খুব শিঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি। আনিত অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এদিকে এ ঘটনায় আটককৃত ৩ জন আসামী জামিনে ছাড়া পেয়ে ভুক্তভোগী শারমিনকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকিসহ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে নিষেধ করেন। এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ বলেন এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply